ঢাকা,শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪

সিঙ্গাপুরের আদলে কক্সবাজারের মাতারবাড়ী

নিউজ ডেস্ক ::
২১ মার্চ, বেলা ১১টা। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। মহেশখালী-মাতারবাড়ী সমন্বিত অবকাঠামো উন্নয়ন প্রস্তাব সম্পর্কিত প্রেজেন্টেশন তুলে ধরছে জাপানের আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা জাইকা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানালেন, তিনি মাতারবাড়ী-মহেশখালী সমন্বিত এলাকাকে সিঙ্গাপুরের আদলে গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছেন।

সেখানে প্রস্তাবিত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি হাবকে কেন্দ্র করে গড়ে তোলা হবে শিল্প-কারখানা। মাতারবাড়ীতে একটি বিশ্বমানের সর্বাধুনিক সমুদ্রবন্দর গড়ে তুলতে আগ্রহী তিনি। ওই সময় জাইকা তার প্রেজেন্টেশনে জানায়, মাতারবাড়ীতে তারা যে গভীর সমুদ্রবন্দরের প্রস্তাব করছেন, সেটির ড্রাফট হবে ১৮ দশমিক ৭ মিটার। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, মাতারবাড়ীতে যে ডিপ সি পোর্টের প্রস্তাব করা হয়েছে তার ড্রাফট হবে ১৮ দশমিক ৭ মিটার। এত বেশি ড্রাফটসম্পন্ন গভীর সমুদ্রবন্দর বিশ্বে আর মাত্র দুটি রয়েছে। এর একটি শ্রীলঙ্কায় এবং অন্যটি দুবাইয়ে। এর ফলে প্রায় এক লাখ মেট্রিক টনের কনটেইনার জাহাজ ভিড়তে পারবে ওই বন্দরে। সূত্রগুলো জানায়, জাপানের অর্থায়নে মাতারবাড়ীতে যে ১২০০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে ওই প্রকল্প থেকেই গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের ভিত্তি রচিত হয়। কয়লাভিত্তিক এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চাহিদা অনুযায়ী বিপুল পরিমাণ কয়লা নামানোর জন্য সেখানে জেটি ও হারবার নির্মাণ করা হবে। গড়ে তোলা হবে তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) টার্মিনাল। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের লক্ষ্যে শিল্প-কারখানা স্থাপনের জন্য থাকবে বিশেষ অর্থনৈতিক জোন। পাশাপাশি পর্যটকদের জন্য গড়ে তোলা হবে পর্যটন কেন্দ্র। সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসী এবং প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন অবকাঠামোতে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিকদের জন্য একটি পরিকল্পিত নগর গড়ে তোলা হবে, যেখানে আধুনিক শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবাসহ প্রয়োজনীয় সব সুযোগ-সুবিধা থাকবে। যাতায়াতের জন্য হাইওয়ে এবং রেলওয়ে লিঙ্ক স্থাপন করা হবে যেটি কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রাম হয়ে সরাসরি ঢাকার সঙ্গে যুক্ত থাকবে। আর বঙ্গোপসাগরকে ঘিরে বাংলাদেশ, ভারত, মিয়ানমার ও চীনকে নিয়ে যে ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রোথ বেল্ট (বিগ বি ইনিশিয়েটিভ) গড়ে তোলার প্রয়াস রয়েছে তার কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে মহেশখালী-মাতারবাড়ী সমন্বিত এলাকা গড়ে তোলার লক্ষ্যও রয়েছে ওই মহাপরিকল্পনায়। গত বৃহস্পতিবার জাইকার প্রেজেন্টেশনে বলা হয়েছে, তারা যে মহাপরিকল্পনাটি করেছে সেটি তিনটি ধাপে বাস্তবায়ন করা হবে। যার মধ্যে প্রথম ধাপে ২০২৪ সালের মধ্যে গড়ে তোলা হবে ১২০০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক আলট্রা সুপার ক্রিটিকাল কোল পাওয়ারড বিদ্যুৎ কেন্দ্র, কয়লা জেটি ও হারবার। ২০৩১ সালের মধ্যে দ্বিতীয় পর্বে গভীর সমুদ্রবন্দরের উপযোগী করে বন্দর সম্প্রসারণ করা হবে এবং এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে। তৃতীয় পর্বে ২০৪১ সালের মধ্যে গড়ে তোলা হবে বিশেষ অর্থনৈতিক জোন, প্রাথমিক এনার্জি সংশ্লিষ্ট শিল্প-কারখানা, পরিকল্পিত নগরায়ণের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো। সূত্র জানায়, মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর ঘিরে দীর্ঘমেয়াদে যে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি হাব গড়ে তোলার প্রস্তাব দিয়েছে জাইকা, ২০৪১ সাল শেষে সেই হাব থেকে ২১ হাজার ৭০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে। গড়ে তোলা হবে ৩ হাজার ৫০০ এমএমসিএফডি ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন এলএনজি টার্মিনাল। বন্দরভিত্তিক অর্থনৈতিক জোন সম্প্রসারণ করে সেটিতে ভারী ও পেট্রোকেমিক্যাল শিল্প-কারখানা স্থাপন করা হবে। আর ২০৪১ সালে ৩য় পর্বের কাজ শেষে মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর প্রায় ৪ দশমিক ৮ মিলিয়ন টিইইউএস কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের সক্ষমতা অর্জন করবে, যা হবে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের কনটেইনার হ্যান্ডলিং সক্ষমতার প্রায় দ্বিগুণ। বিডি প্রতিদিন

পাঠকের মতামত: